শিশুদের যেকোনো কাজে মনোযোগী করতে চাইলে তাদেরকে ভালো পরিবেশ এবং পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা দিতে হবে।পড়াশোনার ক্ষেত্রে ও তাই। শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার জন্য অভিভাবক এবং শিক্ষকরা নিম্নলিখিত টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেনঃ-
১. উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুনঃ
যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে একটা উদ্দেশ্য থাকে। উদ্দেশ্য বিহীন কোনো কাজই সফল হয়না। তাই ছোট বড় সব কাজেই উদ্দেশ্য থাকতে হবে। শিশুদের যদি পড়াশোনার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়, তাহলে তারা পড়াশোনার প্রতি আরও মনোযোগী হবে। পড়াশোনার উদ্দেশ্য হতে পারে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা, নতুন কিছু আবিষ্কার করা এবং ভবিষ্যতে একটি ভালো পেশা অর্জন করা।
২. শিশুদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করুনঃ
শিশুদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করুন। তাদের বলুন যে পড়াশোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনা করলে তারা ভবিষ্যতে একজন ভালো মানুষ হতে পারবে এবং একটা ভালো পেশা অর্জন করতে পারবে। যা একজন মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করে দিনঃ
শিশুরা পড়তে বসার আগেই, পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ আগে থেকেই তাদের প্রস্তুত করে দিন। এতে করে পড়াশোনা শুরু করতে শিশুদের সময় লাগবে না। অন্যথায়, সময় অপচয় হবে।
৪. বাধা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো দূর করুনঃ
বাধা সৃষ্টিকারী যেকোন জিনিসই কাজের ক্ষেত্রে মনোযোগ নষ্ট করতে পারে। তাই শিশুদের পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো দূর করুন। যেমন, পড়াশোনার সময় টিভি দেখা, মোবাইল ফোন ব্যবহার, বা বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা। যাতে করে তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে।
৫. পড়াশোনাকে মজার করে তুলুনঃ
শিশুরা সব সময় মজার জিনিস খুবই পছন্দ করে।পড়াশোনাকে যদি মজার করে তোলা যায় তাহলে শিশুরা পড়াশোনার প্রতি আরও আগ্রহী হবে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক খেলাধুলা, গল্প, কবিতায় পড়াশোনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
৬. শিশুদের পড়াশোনায় সহায়তা করুনঃ
শিশুরা বেশিরভাগ কাজই নিজে নিজে করতে পারেনা। অধিকাংশ কাজে বড়দের সহায়তার প্রয়োজন হয়। অন্যথায় ওরা হতাশ হয়ে যায়। শিশুদের পড়াশোনায় সহায়তা করলে তারা পড়াশোনার প্রতি আরও আগ্রহী হবে। তাই পড়াশোনা বুঝতে সমস্যা হলে তাদের অবশ্যই সাহায্য করুন।
৭. নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার জন্য নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। যদি প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করার অভ্যাস গড়ে তোলা যায় তাহলে শিশুরা কখনোই পড়াশোনাকে একঘেয়ে মনে করবে না, বরং আনন্দ নিয়েই পড়বে। যেকোনো কাজ আনন্দ নিয়ে করলে সে কাজে মনোযোগী হওয়া যায়। এছাড়াও, শিশুদের পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্বাচন করুন। খেয়াল রাখবেন, সেই স্থানটি যেন অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং মনোরম হয়।
৮. কিছুক্ষণ বিরতি দিনঃ
একসাথে অনেক সময় পড়ার টেবিলে শিশুদের বসিয়ে রাখবেন না। এতে শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং তাদের মনোযোগ নষ্ট হবে। তাই পড়াশোনার মাঝে বিরতি দিন। যেমন ৩০ মিনিট পড়াশোনার পরে ১০ মিনিটের একটি ছোট্ট বিরতি দিন। বিরতির সময় শিশুদের হালকা ব্যায়াম করানো যেতে পারে, বা তাদেরকে নিজের মত করে খেলতে দেয়া যেতে পারে।
৯. ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করুনঃ
প্রশংসা পেলে ছোট থেকে বড় সবাই খুশি হয়। প্রশংসা মানুষকে কাজের প্রতি আরো ডেডিকেটেড করে তোলে। আর শিশুরা তো খুবই নরম প্রকৃতির হয়। তাই শিশুদের ছোট ছোট কাজে প্রশংসা করুন এবং এর পাশাপাশি পুরষ্কৃত করুন। তাহলে ওরা বেশ আগ্রহী হবে।
১০. ভালো কিছু উদাহরণ দিনঃ
শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা তাদের অভিভাবক এবং কাছের মানুষদের কাছ থেকে দেখে দেখে শিখে। তাই নিজেদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে, তাহলে তা দেখে শিশুরাও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হবে।
এছাড়াও, ছুটির দিনে শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন। যেমন, জাদুঘর, বিজ্ঞান জাদুঘর, বা লাইব্রেরি। এতে শিশুরা খুব কৌতুহল নিয়ে নতুন নতুন জিনিস শিখতে পারবে এবং তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।